জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট ডিগ্রি ভর্তি ২০২৫ [উন্মুক্ত আবেদন করতে পারবে]

১। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি প্রোগ্রাম :
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্স কোর্সের পাশাপাশি এখানে ডিগ্রি কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। অনার্স কোর্সের মত এটা অপ্রতুল নই। কারন বাউবির অধীন অনার্স পড়তে হলে ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে স্টাডি সেন্টারে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু ডিগ্রি কোর্স বাংলাদেশের প্রায় সকল সকল জেলাতেই বাউবির অনুমোদিত স্টাডি সেন্টার রয়েছে। ডিগ্রি প্রোগ্রামের মেয়াদ ০৩ বছর। অবশ্য ০৩ বছরের কোর্স শেষসহ ফলাফল পেতে প্রায় ০৫ বছর লেগে যায়। এখানে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে হয় (০৬ মাস ধরে ০১ সেমিস্টার) সহ মোট ০৬ সেমিস্টার ০৩ বছরে। অর্থাৎ বছরে ০২ টি করে পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে বিএ ও বিএসএস ০২ টি প্রোগ্রামে ভর্তি করা হয়। বিএ ও বিএসএস এর বিষয়টা পরবর্তী ধাপে আলোচনা করবো। ০৩ বছরের প্রোগ্রামে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা হতে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখানে ০৩ বছরে কোর্সের সকল বইগুলো ফ্রি পাবেন স্টাডি সেন্টার হতে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোর্সের সুবিধা :
বিঃদ্র: বাউবির যাবতীয় কোর্সের সুবিধা-অসুবিধা হয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন লিখেছিলাম এখানে

বাউবির ডিগ্রি কোর্সের অসুবিধার মধ্য রয়েছে:
- বাউবির শিক্ষার্থীর অনেকের অভিযোগ ভালো ফলাফল হয়না, ব্যাপক ফেল করানো হয়। ফলাফল দিতেও অনেক দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাছাড়া পূর্ননিরীক্ষণের ফলাফল পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাউবির ডিগ্রি প্রোগ্রামের আরেকটি বড় অসুবিধা হলো: আপনি বাউবি হতে ডিগ্রি পাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে প্রাইভেট ভার্সিটি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যাকালীন কিংবা উইকেন্ড কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।
- যখন বাউবি হতে ডিগ্রি পাশ করে দেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে মাস্টার্স কোর্সের সুযোগ না পেয়ে বাউবিতে যখন ০২ বছরের মাস্টার্স করতে যাবেন তখন সর্বমোট খরচ হয়ে যাবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। মূলত বলা যেতে পারে এটা বাউবির একটা ধান্দাবাজী ব্যবসা সিস্টেম। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ০২ বছরের মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করতে লাগে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মত, প্রাইভেট মাস্টার্স করতে ব্যয় হয় ৭-৮ হাজার টাকার মত।
- অপরদিকে বাউবিতে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হতে গেলে আপনি ডিগ্রি কোর্সের মত সচারচার টিউটোরিয়াল কেন্দ্র পাবেন না। মাস্টার্স কোর্স করতে হলে আপনাকে ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরে অবস্থান করতে হবে।
২। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি কোর্স সমূহ:
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোতে ০২ ধরনের ডিগ্রি কোর্স রয়েছে সেটি হলো রেগুলার ডিগ্রি ও প্রাইভেট ডিগ্রি। রেগুলার ডিগ্রি হলো এসএসসি ও এইচএসসি পাশের সাল ০৩ বছরের মধ্য হতে হবে। যেমন: এই বছর ২০২৩ সালে যদি কেউ ডিগ্রি রেগুলার প্রোগ্রামে ভর্তি হতে চায় সেখানে এসএসসি পাশের সাল ২০১৮,২০১৯, ২০২০ এবং এইচএসসি পাশের সাল ২০২১, ২০২২, ২০২৩ হতে হবে।
- রেগুলার ডিগ্রিতে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাতে আলাদাভাবে জিপিএ ২.০ পেয়ে পাশ করতে হবে।
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রেগুলার ডিগ্রি কোর্স গুলো হলো: বিএ, বিএসএস, বিবিএস এবং বিএসসি। মূলত বিএ/বিএসএস এটা মানবিক শাখা বলতে বুঝায়।
- রেগুলার ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হতে কলেজ অনুযায়ী খরচ হয় ৩৫০০/- টাকা হতে সর্বোচ্চ ৭,৫০০/- টাকা। প্রতি বছরে পরীক্ষা ও ফর্ম পূরনে খরচ হয় প্রায় ৩,৫০০/- টাকা হতে সর্বোচ্চ ৬৫০০/- টাকা। মূলত বেসরকারি কলেজের ফি ও চার্জ অনেকটা বেশি।
- অপরদিকে যারা দীর্ঘদিন অর্থাৎ অনেক বছর আগে এইচএসসি পাশ করে পরবর্তী উচ্চতর শিক্ষা নিতে চান তাদের জন্য হচ্ছে প্রাইভেট ডিগ্রি। প্রাইভেট ডিগ্রির ভর্তির নিয়ম হলো: যে বছর সার্কুলার দিবে সেই সার্কুলার অনুযায়ী এইচএসসি পাশের সাল ০২ বছর আগের হতে হয়। যেমন এই বছর (২০২৩) এ- সার্কুলার দিয়েছে এইচএসসি পাশের সাল ২০২১ এর পূর্বে হতে হবে।
- প্রাইভেট ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হতে কলেজ অনুযায়ী খরচ হয় ৯৫০/- টাকা হতে সর্বোচ্চ ১২৫০/- টাকা। প্রতি বছরে পরীক্ষা ও ফর্ম পূরনে খরচ হয় প্রায় ১,৫০০/- টাকা।
- প্রাইভেট ডিগ্রি কোর্সের সরকারি ও কেসরকারি কলেজে খরচ প্রায় একই, খুব বেশি একটা পার্থক্য নাই।
জাতীয়র অধীন রেগুলার ও প্রাইভেট ডিগ্রি কোর্সের পার্থক্য:
- রেগুলার কোর্সে নিয়মিত ক্লাশ করতে হয়। (যদিও কলেজে তেমন কেউ নিয়মিত ক্লাশ করেনা, ফর্মালিটি মাত্র) প্রাইভেট কোর্সের কোনরকম ক্লাশ না করলেও হবে।
- প্রাইভেট ও রেগুলার ডিগ্রি কোর্সের কোর্স, সময় ও মান একই। ০৩ বছরে ০৩ বার পরীক্ষা দিতে হয়। এবং ০৩ বছরে ২০টি কোর্সসহ ৮৫ ক্রেডিট কোর্স সম্পন্ন করতে হয়।
- ক্লাশ না করলেও উভয়কে বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার আগে অবশ্যই ইনকোর্স পরীক্ষাতে অংশ গ্রহন করতে হয়।
- যে কোর্স গুলো ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকে সেইগুলোতে প্রাইভেট শিক্ষার্থী নিতে পারবেনা যেমন: আইসিটি, ভূগোল, গাহর্স্থ্য ইত্যাদি।
- বিএ, বিএসএস, বিএসসি ও বিবিএস কোর্সে রেগুলার শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষার্থী শুধুমাত্র বিএ, বিএসএস কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।
- রেগুলার ও প্রাইভেট ডিগ্রির সিলেবাস একই।
- পূর্বেই বলেছি রেগুলার কোর্সে ভর্তি হতে হলে নিদিষ্ট বয়স ও পরীক্ষার পাসের সালের মধ্য থাকতে হয়। কিন্তু প্রাইভেট কোর্সে কোন বয়সের লিমিট নাই।
- রেগুলার ও প্রাইভেট ডিগ্রি উভয় কোর্সের মসদ প্রদান করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ: [ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের সকল কলেজ গুলোতে অর্থাৎ ০৭ কলেজে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ হতে ডিগ্রি পাস কোর্স সম্পূর্ণ বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। এমনকি জাতীয় কিংবা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোন ডিগ্রি কিংবা অনার্স পাস করা শিক্ষার্থী ০৭ কলেজে কোন ভাবেই মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না।]
ভর্তি বিজ্ঞপ্তি : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রাইভেট ডিগ্রি কোর্সের ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে যেটা উপরের পয়েন্টে উল্লেখ করেছি। যদি কেহ আবেদন করতে না পারেন তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে জানালে আমাদের টিম নাম মাত্র মূল্য সহায়তা করবে।
বাউবি ও জাতীয়র ডিগ্রির কোর্সের খরচের বিবরণী:
বাউবির আন্ডারে ডিগ্রি কোর্সের খরচ উপরের পয়েন্টে বলেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে সরকারি কলেজগুলোতে ০৩ বছরের ডিগ্রি কোর্স করতে সর্বমোট ব্যয় হয় ৯ হাজার টাকা হতে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেসরকারি কলেজগুলোতে খরচ হয় সরকারির তুলনায় অনেক বেশি। এখানে সর্বমোট খরচ হতে পারে ২৫ হতে ৩০ হাজার টাকা। প্রাইভেট ডিগ্রির ০৩ বছরের সমমানের কোর্স করতে সর্বমোট ব্যায় হতে ০৫ থেকে ০৭ হাজার টাকা। জ্বী! এটাই সত্যি প্রাইভেট ডিগ্রির মত বাংলাদেশে এত স্বল্প ব্যয়ে আর কোথাও পড়াশোনা আছে বলে মনে হয়না। প্রাইভেট ডিগ্রির জন্য ভর্তির সার্কুলার প্রতি বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে দেওয়া হয়। সাধারনত দেশের জেলা শহরের সরকারি কলেজগুলোতে প্রাইভেট ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়া যায়। বেসরকারিতে ভর্তি হওয়া যায় না, তবে ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি কলেজে প্রাইভেট ডিগ্রি ভর্তি হওয়া যায়।[উল্লেখ্য বেসরকারি কলেজেও প্রাইভেট ডিগ্রি করতে ০৩ বছরে সর্বমোট ব্যয় হবে ৭-৮ হাজার টাকার মত।

ডিগ্রিতে বিএ কিংবা বিএসএস কোর্সের কি পার্থক্যঃ
ডিগ্রীতে আপনাকে মোট তিনটি সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে হবে। যেমন – ধরেন আপনি BA নিয়ে পড়বেন এখন কলেজে BA তে- ক) রাষ্ট্রবিজ্ঞান / সমাজকর্ম / সমাজবিজ্ঞান
- খ) ইতিহাস / ইসলামিক ইতিহাস
- গ) দর্শন / অন্য যেকোনো বিষয়
বাউবির সনদপত্রের মান:
সবাই জানি বাউবি একটি দূর শিক্ষণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর সনদপত্রের মানও সরকারি অনুযায়ী সমমান।একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের সনদপত্রের সমতা আর কোয়ালিটির সমতা কিন্তু এক বিষয় নই। সুতরাং বাউবির শিক্ষার কোয়ালিটি কিন্তু এখনো জেনারেলের উচ্চ কাতারে পৌঁছাতে পারে নাই। তারপরেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পত্রের মান আরো একধাপ এগিয়ে। সত্যিকথা বলতে কি যতই নিয়ম কানুন বা সমমান লেখা থাকুকরে ভাই নিয়োগ বোর্ড কিংবা ভাইভা বোর্ডে অবশ্যই দৃষ্টিকোণ হতে যেটার মান বেশি সেটিই গ্রহনযোগ্য হবে। উদাহরন: আপনার প্রতিষ্ঠানে আপনি যদি জনবল নিয়োগ করেন সেখানে বাউবি হতে পড়ুয়া একজন আসলো, অপরজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আসলো। কাকে নিয়োগ দিবেন আপনি?? তবে তারপরেও মেধা, প্রতিভা, নিয়োগ পরীক্ষাতে টিকলে আপনিও ঢাবি কিংবা জাতীয় হতে কমে যাবেন না। বাউবি হতেও পাশ করে অনেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকুরীতে ভাল অবস্থানে আছে তবে সেটা বলা যেতে পারে ১০০ এ- ২/৩ জন। অবশ্য যদি নিয়োগে মামা-খালু থাকে সেটা ভিন্ন কথা।সর্বশেষ বক্তব্য:
অপরদিকে যাদের শর্টকাট ভাবে পাস করার ইচ্ছা কিংবা শুধুমাত্র সনদপত্র অর্জন করতে চান তাহলে বাউবিই আপনার সেরা হতে পারে। তবে লেখাপড়াসহ দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন, সনদপত্রের মান এর দিকে থেকে ব্যক্তিগতভাবে আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেই এগিয়ে রাখবো। আজকের মত বিদায় হচ্ছি। প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন ও পরিচিতজনদের মাঝে শেয়ার করবেন। উল্লেখ্য আমাদের ব্লগ সাইট ভিজিট করতে ব্রাউজারের সার্চ বার কিংবা গুগলে গিয়ে পিয়নমামা ডটকম কিংবা Peonmama লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।